জলরং এর নাম শুনলেই বোঝা যায়, তা জল মিশিয়ে আঁকতে হয়। জলরং বাক্সে ছোটো ছোটো খোঁপে চারকোনা ট্যাবলেটের মতো থাকে। আলাদা আলাদা ট্যাবলেট অবস্থায়ও পাওয়া যায়। তবে টিউবের মধ্যে পেস্টের মতো অবস্থায়ও জলরং তৈরি হয়ে থাকে। জলরং ও পোস্টার রং কাছাকাছি হলেও গুণগত দিক থেকে অনেকটা ভিন্ন। জলরং স্বচ্ছ ও পাতলা। একটি রঙের ওপর আরেকটি রং দিয়ে আগের রংটি ঢেকে দেওয়া যায় না। স্বচ্ছ হওয়ার কারণে দুটো রং মিলে অন্য একটি রং হয়। জলরং সাধারণত কাগজের ওপর ব্যবহার করা হয়ে থাকে। জলরং ছবি আঁকার জন্যে একটু মোটা ও খসখসে জমিনের কাগজ সবচেয়ে উপযোগী। আমাদের দেশে যে মোটা কার্ট্রিজ পাওয়া যায় তাতে জলরঙে আঁকা যেতে পারে। যাদের পক্ষে সম্ভব তারা হ্যান্ডমেড কাগজ বা উন্নত ধরনের কাগজ জোগাড় করে নেবে।
জলরং ব্যবহারের নিয়ম
এক তা কার্ট্রিজ কাগজ অর্ধেক করে কেটে নাও। ইচ্ছে করলে আরও ছোটো করে নিতে পার। মনে রাখতে হবে কাগজ যেন দুমড়ে-মুচড়ে বা ভাঁজ হয়ে না থাকে। কাটাও যেন সুন্দর হয়। কাগজটিকে হার্ডবোর্ডের ওপর ক্লিপ দিয়ে এমনভাবে আটকাও যেন টান-টান থাকে। বোর্ডকে মেঝেতে বা কোনো উঁচু জিনিসে হেলান দিয়ে তোমাদের সামনে রাখ। একটা মগে পরিষ্কার পানি নাও। তার পাশে জলরঙে আঁকার জন্য বিশেষভাবে তৈরি প্যালেট অথবা কয়েকটি সাদা পিরিচ রাখ। সে সাথে রঙের টিউব বা রঙের কৌটাগুলি হাতের কাছে রাখ। এবার আঁকা শুরুর পালা। শুরু করার আগে খুব ভালো করে ভেবে নাও কী আঁকবে। ধরা যাক, সাদা কালো মেঘে ছাওয়া আকাশ আঁকবে। পেনসিলে হালকা দাগ দিয়ে মেঘের ড্রইং করে নাও। রাবার দিয়ে মোছামুছি না করলেই ভালো। বেশি ঘষলে কাগজের মসৃণতা নষ্ট হয়। রং লাগালে ঘষে দেওয়া স্থানে অপ্রয়োজনীয় দাগ দেখা দিতে পারে। ছবিও নষ্ট হতে পারে। রং লাগাবার আগে পরিষ্কার ভেজা ন্যাকড়া দিয়ে অথবা চওড়া তুলি দিয়ে কাগজটিকে ভিজিয়ে নাও। কিছুক্ষণ অপেক্ষা কর। দেখবে কাগজের চুপচুপে পানি কিছুটা শুকিয়ে এসেছে। এবার পিরিচে রং নাও। কিছুটা বাদামি রংও নিতে হবে। পানির সাথে বাদামি, নীল রং তুলি দিয়ে গুলে নাও এবং চওড়া তুলি দিয়ে আধ-ভেজা কাগজে আলতো করে লাগাতে হবে। মনে রাখবে রং লাগানো শুরু করতে হবে কাগজের উপর থেকে। তুলি চালাতে হবে বাঁ দিক থেকে ডানে। পানির মতো রং নিচের দিকে গড়াবে। গড়ানো রংকে তাড়াতাড়িভাবে তুলি দিয়ে টেনে ওয়াশ শেষ করবে। এভাবে নীল রঙের ওয়াশ দেওয়ার সময় ড্রইং অনুযায়ী সাদা মেঘের অংশগুলো ছেড়ে যাবে। অর্থাৎ কাগজের সাদা যেন রয়ে যায়। এইভাবে নীলের ওয়াশ শেষ করে কিছুক্ষণ অপেক্ষা কর। রং কিছু শুকিয়ে এলে কালো মেঘের কাজ শুরু করবে। এজন্য নীল এবং কালো মিশিয়ে আবার কালো ও বাদামি মিশিয়ে দুটি পিরিচে আলাদা করে পরিমাণমতো রং তৈরি করে নাও। এরপর প্রথমে কিছুটা হালকা করে নীল এবং কালো মেশানো রং ড্রইং অনুযায়ী কালো মেঘের অংশে লাগাও। তারপর কালো এবং বাদামি মেশানো রঙ গাঢ় করে বেশি অন্ধকার বোঝাতে আগের রঙের উপরেই কিছু অংশে লাগাও। দেখবে ভেজা কাগজ এবং ভেজা রঙের ওপর এইভাবে রং লাগালে বৃষ্টির ভেজা ভেজা কালো মেঘের ধরনটা এসে যাবে। এবার সাদা মেঘে কালো আর বাদামি রংকে খুব হালকা করে মিশিয়ে যেখানে শেড প্রয়োজন সেখানে লাগাও। তোমাদের ছবিটি আঁকা এখানেই শেষ। এখানে একটি সহজ পদ্ধতির কথা বলা হলো। এই পদ্ধতিতে খুব কম সময়ের মধ্যে একটি জলরঙের ছবি আঁকা যাবে। তবে বিষয় অনুসারে অনেক ধরনের রং প্রয়োজন হবে। আলোছায়া অনুযায়ী রঙের তারতম্য হবে এবং সময়ও বেশি লাগবে। শ্রেণিতে শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে বারবার অনুশীলন করে জলরঙের ব্যবহার আয়ত্ত করতে হবে।
Read more